বৈশ্বিকভাবে মহামারী করোনা ভাইরাসে স্তব্দ পুরো পৃথিবী। মৃত্যুর মিছিল যেন কোনভাবে থামছেনা সেই সাথে থামছেনা আক্রান্তের সংখ্যা। মহামারী করোনায় ইতিমধ্যে মাতৃভুমি বাংলাদেশেও মৃত্যুবরন করেছে ২৬৯ জন আর আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৭৮২২।
এহামারী এ করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত ও মৃত্যু যেন প্রতিটি মানুষকে পরিবর্তন করে তুলেছে আত্নীয়-স্বজন পরিবার-পরিজন থেকে। এ ভাইরাসটি যেন মানুষকে “নিজে বাচলে বাপের নাম” এ করে তুলেছে। কিন্তু মহামারী এ কারোনা ভাইরাস পরিবর্তন করেনি ফতুল্লা থানা যুব শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক ও কাশিপুর ইউনিয়ন ৭ নং ওয়ার্ড পঞ্চায়েত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো.সাইফুল ইসলাম জুয়েল প্রধানকে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কাশিপুরের যেখানেই কেউ মৃত্যুবরন করছে তাকেই গোসল করানোসহ দাফন করতে ছুটে যাচ্ছেন এ সময়ের মানবতার আস্থার প্রতিক জুয়েল প্রধান।
একান্ত আলাপকালে সাইফুল ইসলাম জুয়েল প্রধান এ প্রতিবেদককে জানান,আমার এ ৭ নং ওয়ার্ডে আমার নেতৃত্বে প্রায় ২০ বছর পুর্বে একটি যুব সংগঠন তৈরী করি যার কাজ ছিলো সাধারন মানুষের সেবা করা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের গোসল ও দাফনে নিজেকে কেন জড়ালেন জবাবে তিনি বলেন,ভাই সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মৃত্যুর স্বাদ প্রতিটি মানুষকে নিতেই হবে সেটা আজ বা কাল। একজন মানুষ মরবে আর আক্রান্ত হবো সে ভয়ে তার দাফন সম্পন্ন হবে না সেটা কি মানুষের কাজ।
আমার কাশিপুর ইউনিয়নের ২,৬,৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডে ইতিমধ্যে প্রায় ৮ জন মৃত মানুষের গোসল ও দাফন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। আমার টিমে ৪/৫জন সদস্য রয়েছে যারা নিহতের লাশকে গোসল করিয়ে দাফন পর্যন্ত সম্পন্ন করছি। তিনি বলেন,আমি নিহত ব্যক্তিকে নিজ হাতে গোসল করিয়ে কাফনের কাপড় পড়িয়ে নিজ হাতেই কবরে শায়িত করি। শুধু তাই নয় কয়েকদিন পুর্বে বন্দরে সেফটিক টাংকি বিস্ফোরনে নিহত সেই বোনের দাফনও আমি করেছি সেখানে গিয়ে।
জুয়েল আরো বলেন, আমার ইউপিতে যেখানেই কেউ করোনা বা স্বাভাবিক মৃত্যুবরন করছে সেই লাশটি ভয়ে কেউ গোসল বা দাফনে এগিয়ে আসছেনা। এটা কেমন কথা আরে ভাই আমাকেও তো মরতে হবে। তিনি বলেন, শুধু লাশের গোসল বা দাফনই নয় তাদেরকে বিনামুল্যে কাফনের কাপড়সহ যাবতীয় জিনিষগুলো দিচ্ছি আমি ও আমার সহযোদ্ধা পঞ্চায়েত কমিটির সাধারন সম্পাদক আহমেদ হোসেন রাজুর পক্ষ থেকে। আমরা এ দুইভাই মিলে সকল মৃত ব্যক্তির কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা করে যাবো সর্বদা। করোনার ভয়ে কেউ স্বাভাবিক মৃত ব্যক্তির লাশের পাশে আসছেনা অথচ আপনি সেখানে অগ্রসর হয়ে গোসলসহ দাফনের কাজে এগিয়ে আসছেন এ বিষয়ে পরিবার থেকে কোন বাধা আসেনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,বাধাতো আসবেই কিন্তু পরিবারের প্রতিটি সদস্য জানেন আমি দীর্ঘদিন যাবত মৃত ব্যক্তিকে গোসল ও দাফন করে থাকি তাই তারা তেমন কিছু বলতে পারছেনা।
জুয়েল প্রধান আরো বলেন, কাশিপুরের কয়েকটি ওয়ার্ড করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরনকারী ও স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরনকারীদের গোসল করানো ও দাফন ছাড়াও আমার পঞ্চায়েত কমিটির পক্ষ থেকে আমি ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন রাজুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ৭ নং ওয়ার্ডে প্রায় ৫ শতাধিক অসহায় ও কর্মহীন পরিবারের মাঝে ত্রান সামগ্রী দিয়েছি এবং আমার ব্যক্তিগত অথ্যায়নে রিক্সা গ্যারেজের বেকার হয়ে পড়া ড্রাইভারসহ কর্মহীন প্রায় আড়াই শতাধিকপরিবারের মাঝে ত্রান সামগ্রী দিয়েছি। স্থানীয়দের মাঝে একজন আস্থার প্রতিক হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষের কল্যানে মানুষ এগিয়ে আসলে তাকে অবশ্যই ভাল চোখে দেখবে এটা স্বভাবিক তবে আমি ওয়ার্ডের প্রতিটি মানুষের মাঝে ভালবাসার প্রতিক হিসেবে থাকতে চাই। কারন তাদের ভালবাসা আমাকে আগামীর পথচলাকে আরো গতিশীল করে তুলবে।
এনসিসি ১৩ নং কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও এনায়েতনগর ইউপির সংরক্ষিত মেম্বার রোজিনা আক্তার রোজি আপা আপনার মতই করোনায় মৃত্যুবরন কারীদের পাশে রয়েছে তাদের সর্ম্পকে আপনি বলবেন এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল প্রধান বলেন,“মানুষ মানুষের জন্য” তারা এ ক্রান্তিলগ্নে যে কাজ করছেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। আমি বলবো প্রতিটি ওয়ার্ডে যেন তাদের মত একজন করে আস্থা ও বিশ^াসের মানুষের প্রয়োজন। তাহলে অবশ্যই মানুষের প্রতি মানুষের আস্থা ও ভালবাসা আরো বাড়বে।